অদক্ষ পূর্বাভাস

বিশেষজ্ঞদের মতে, নড়বড়ে পূর্বাভাসের ফলে সিংহভাগ সমস্যার সৃষ্টি হয় যা আর্থিক সঙ্কটের কারণ হতে পারে। অনেক বিশ্লেষকই তাদের ভবিষ্যদ্বাণীর যথার্থতা সম্পর্কে নিশ্চিত নন, যে কারণে আর্থিক বাজারে সময় নষ্ট হচ্ছে। এর আগে, প্রাক্তন ফেডারেল রিজার্ভ চেয়ারম্যান জ্যানেট ইয়েলেন বলেছিলেন যে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ২০০৭-২০০৯ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটের পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। তদুপরি তিনি যোগ করেছেন, এমনকি সঙ্কটের মধ্যেও কি ঘটছে তা ফেড খুব কমই বুঝতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক গোষ্ঠী একই পথ অনুসরণ করছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে পরবর্তী আর্থিক সংকট আরও গুরুতর হতে পারে। তবে তারা চিহ্নিত করেছেন যে এর জন্য সতর্কভাবে প্রস্তুত হওয়া বরং আরও কঠিন কাজ।

আর্থিক ব্যবস্থায় সাইবার হামলার হুমকি

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন যে বিশ্বব্যাপী আর্থিক ব্যবস্থা হ্যাক হতে পারে। এর ফলে বৈশ্বিক বাজারে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে। বিশ্বব্যাপী সাইবার আক্রমণের আতঙ্ক বিশ্বের বাজারগুলোকে আর্থিক মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে৷ ফলস্বরূপ ট্রেডিং এবং পেমেন্ট সিস্টেম ব্যাঘাত সৃষ্টি হবে ও বাজারের মুল্য প্রভাবিত হবে। ফলে কেউ খুঁজে বের করতে পারবে না যে সে দেউলিয়া হয়ে গেছে নাকি এখনও ধনী রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভুল হিসাব

বর্তমানে, বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো একটি আন্তর্জাতিক ক্লাব হিসেবে কাজ করে থাকে। তবে, তাদের সিদ্ধান্ত প্রায়ই অনিশ্চয়তার চিহ্ন বহন করে। ফলে তাদের কাজে সমন্বয়হীনতার ছাপ থেকে যায়। বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী সম্পদের মূল্যস্ফীতিকে উস্কে দিয়েছে। সুতরাং, বিশেষজ্ঞরা নিকট ভবিষ্যতে সুদের হার বৃদ্ধি এবং সম্পদের মূল্য হ্রাসের পূর্বাভাস দিয়েছেন। সম্পদের মূল্যের পতন হলে, স্টক মার্কেটও ধ্বসে পড়বে ও এইভাবে একটি সংকটের সূচনা হবে। ফলস্বরূপ ভর্তুকি হিসেবে সরকারি অর্থ খরচ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে।

আবাসন বাজারের আরেকটি ধ্বস

ভোক্তা মূল্যবৃদ্ধির কারণে আবাসন বাজার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, বাড়ির দাম বর্তমানে তরঙ্গের মত বাড়ছে (প্রতি বছর ১৮% এর বেশি)। অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে ক্রমবর্ধমান সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করছে। যেসব দেশের বাড়ির দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে সেখানেও একই রকম চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি বৈশ্বিক আবাসন খাতের জন্য অনেক বড় একটি ধাক্কা, যা শুধুমাত্র ফেডকেই নয় অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও কোণঠাসা করে ফেলেছে। আবাসন মূল্য ঋণ এবং সুদের হারের উপর নির্ভর করে। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত যে বাড়ির দামের ব্যাপক পতন আরেকটি বৈশ্বিক সংকটের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এই ধরনের উদ্বেগ ফেডকে আবাসন মূল্যের বৃদ্ধি স্ফীত করতে বাধ্য করছে। একই সাথে, অতিমূল্যায়িত এবং ঋণে জর্জরিত সম্পত্তির বাজার প্রায়ই আর্থিক সংকটের কারণ হয়ে থাকে।

নয়া অতিমারী বা যুদ্ধ

দুই বছর ধরে চলমান করোনাভাইরাস অতিমারী আমাদের অনেক কিছু পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ নতুন হুমকির আভাস দিয়েছেন যা বর্তমানের চেয়ে আরও মারাত্মক। বর্তমানে বিশ্ব কোভিড-১৯ ভাইরাসের নতুন ধরনের সাথে লড়াই করছে। এখন পর্যন্ত এই লড়াই অসম থেকে গেছে। তদুপরি, নেতৃস্থানীয় ভাইরোলজিস্টরা জানিয়েছেন যে কোভিড-১৯ চিরকাল আমাদের সাথে থাকতে পারে। আরেকটি হুমকি হল সম্ভাব্য বৈশ্বিক সামরিক সংঘাত। অনেক বিশ্লেষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক অবনতি হওয়ার পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সশস্ত্র সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন।